জেলার খবরট্রেন্ডিং নিউজদিনাজপুরদেশবিদেশ

সেলফিতে চাঙ্গা আ.লীগ

যোদ্ধা ডেস্কঃ ‘খেলা হবে’ শব্দটি ভাইরাল হয় নারায়ণগঞ্জের একজন বিতর্কিত এমপির বক্তব্য থেকে। স্থানীয় সিটি কর্পোরেশনের মহিলা মেয়রকে উদ্দেশ করে তিনি এ বক্তব্য দেন। অতঃপর ‘খেলা হবে’ বক্তব্য লুফে নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ‘খেলা হবে’ সেøাগান তোলেন। রাজনৈতিক নেতা তো বটেই, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মুখেও উচ্চারিত হয় ‘খেলা হবে’। বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ‘১৬ আগস্ট খেলা হবে দিবস’ পালন করে। প্রতিবছর ১৬ আগস্ট এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

‘খেলা হবে’ শব্দটি নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্য, রাজনীতির সিরিয়াস বিষয়ে ‘খেলা হবে’ বালখিল্যতা-ছ্যাবলামি করা উচিত নয়। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের রাজনীতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ‘খেলা হবে’ এর মতো হয়ে গেছে। ফুটবল খেলার মঠের মতো রাজনীতির মাঠে কখন কোন দল এগিয়ে থাকে বলা মুশকিল।

বাংলাদেশের রাজনীতি যেন মাঠের ফুটবল খেলার মতোই। ফুটবল খেলায় যে দল প্রতিপক্ষ্যের জালে গোল দিতে পারে সে দল বিজয়ী হয়। ফুটবল খেলার গোল দেয়ার মতোই রাজনীতিতে ‘নির্বাচনে বিজয়ী’ হওয়াকে ধরা হলেও রাজনীতিটাও হয়ে গেছে ওই ফুটবল খেলার মাঠের মতোই। আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলায় মাঠের দৈর্ঘ্য ১২০ গজ হলে প্রস্থ হবে ৮০ গজ। এ সীমানার মধ্যে যখন যে দলের খেলোয়াড়ের পায়ে বল থাকে এবং প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের দিকে বল নিয়ে গেলেই মনে হয় জিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিটাও হয়ে গেছে ওই ফুটবল খেলার মতোই। এর মাঠ হচ্ছে সারাদেশ।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে যেন রাজনীতির খেলা। এ খেলায় কোন দল কখন এগিয়ে থাকে তা বলা দুষ্কর। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৫ হলেও নির্বাচনে মূল খেলোয়াড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নিজেদের সুবিধা বুঝে এ দুই দলের ছাতার নীচে ভাগ হয়ে গেছে অন্য দলগুলো। ফুটবল খেলা ৯০ মিনিট হলেও রাজনীতির একই খেলা হয় ভোটের দিন। তবে খেলার প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর আগেই।

এ খেলায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণা, একদফা দাবিতে বিএনপির সমাবেশ-মহাসমাবেশ ও পথযাত্রায় লাখ লাখ লোকের সমাগমে মনে হতো রাজনীতির খেলায় বিএনপি এগিয়ে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জি-২০ সম্মেলনে দিল্লিতে জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের খালি পায়ে হাঁটু গেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনের দৃশ্য, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ঢাকা সফর এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর ঢাকা সফরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ নেতাকর্মীদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে, কথা বলে শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। এ সেলফি আর বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বার্তা পেয়েছেন যে, শেখ হাসিনা সবকিছু ম্যানেজ করে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে গত ১২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও জো বাইডেনের মধ্যে চমৎকার আলাচনা হয়েছে। খুব ভালো, ভালো কথা হয়েছে। সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার নিয়ে কাজ করেন শুনে জো বাইডেন প্রশংসা করেছেন। পরবর্তীতে যোগাযোগের জন্যে ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়েছেন এবং বাইডেন কার্ড চেয়ে নিয়েছেন।

অন্যদিকে রাজনীতির খেলার মাঠে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে বিএনপি। ২৮ আগস্ট লাখ লাখ লোকের সমাবেশ করলেও ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দলটি। যা এখনো সামলে উঠতে পারেনি। তবে দলটি এ মাসে দলের তরুণ নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে কয়েকটি রোডমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০/২২ দিনে বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, সেলফি তোলেন। এসব বৈঠক, সেলফিতে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর যে চাপ ছিল তা বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এসব দেখা সাক্ষাতে কমে যাবে। ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান করতে শেখ হাসিনা ২২ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যান। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেজের সঙ্গে বৈঠক করেন। অতঃপর ৭ সেপ্টেম্বর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ঢাকা আসেন। এসময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি কিছু আন্তর্জাতিক প্লেয়ার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট দলের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে- যেটা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক আচরণ ও অগ্রহণযোগ্য।’ অবশ্য এর জবাবে গত ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘যারা প্রতিবেশি দেশকে আক্রমণ করে নারী-শিশুসহ অসহায় মানুষদের নির্বিচারে হামলা করছে, সেই রাশিয়ার মুখে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ নিয়ে কথা বলা মানায় না’।

৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছবি তোলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ করে এ সেলফি তোলার আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা-সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে বাইডেনের তোলা সেলফি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। আবার মহত্মা গান্ধীর প্রতি খালি পায়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নতুন একটি ছবি ভাইরাল হয়। দেখা যায়, চেয়ারে বসা শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খালি পায়ে হাঁটু ঘেরে বসেছেন সুনাক।

ছবিটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে ঋষি সুনাক বিতর্কের মুখে পড়লেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হৃদয় ছুঁয়েছে। দলটির নেতারা ঋষি সুনাকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জি২০ সম্মেলন থেকে ঢাকায় আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তাঁর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে বিদায় জানানোর দৃশ্যের ছবিও ভাইরাল হয়। এসব নিয়ে খোশ মেজাজে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সেলফি ভাইরাল হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাইডেনের সঙ্গে সেলফি দেখে বিএনপির ঘুম হারাম। বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁসহ বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জি২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্ব নেতাদের সাথে শেখ হাসিনার কুশল বিনিময়ই প্রমাণ করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। আরব আমিরাত ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টদের বৈঠক হয়েছে। ছবি কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের (আওয়ামী লীগ) সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আগামী দিনে আরো ঘনিষ্ঠ হবে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ নেতাদের এ খোশমেজাজ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের নেতিয়ে পড়াই বলে দেয় দেশের রাজনীতি কার্যত ‘খেলা হবে’ পর্যায়ে চলে গেছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button