দেশ

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর

যোদ্ধা ডেস্কঃ লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত।’ ‘কদর’ শব্দের অর্থ হল মর্যাদা, সম্মান, ভাগ্য, পরিমাণ বা নির্ধারণ করা। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুমিনদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (সহীহ মুসলিম)। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন। রমজানের তৃতীয় জুমায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের তিলধরার ঠাঁই ছিল না। মসজিদে মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লি রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নিজের গুনাসমূহ মাফ এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মসজিদে মসজিদে মোনাজাতে মুসল্লিদের মাঝে কান্নাররোল পড়ে যায়। রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মহিলাদের পৃথক নামাজের স্থানেও তিলধরার ঠাঁই ছিল না।

গাজীপুরের টঙ্গীস্থ পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ্ মস্জিদুল আক্সার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজানের একটি রাতের ইবাদত এক হাজার মাস বা ৮৪ বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আমি এ কোরআন অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী ? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ (সূরা কদর ঃ আয়াত ১-৩)। হযরত আবু হুরায়রা (রাদি.) বলেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে ইবাদত করবে তার অতীতের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী শরীফ ঃ হাদিস ৩৪ ই.ফা,) ইমাম মালিক (রাদি.) তার সংকলিত হাদিস গ্রন্থ মুআত্তায়ে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে একবার পূর্ববর্তী উম্মতের বয়সের বিষয়টি অভিহিত করা হলো। প্রিয় নবীর উম্মতের বয়স তার কাছে খুব কম মনে হলো। অন্য নবীগণের উম্মতের হায়াত দীর্ঘ হওয়ায় তারা যে পরিমাণ নেকি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে আমার উম্মত তো তাদের সমান পারবে না। আল্লাহ্ সুবাহানাহু তার হাবিবকে সূরা কদর নাযিলের মাধ্যমে সান্ত¦না দিয়ে বলেন আমি আপনার উম্মতকে লাইলাতুল কদর দান করেছি যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (মুআত্তা ঃ- হাদিস ৬৯৮)।

খতিব বলেন, মর্যাদাপূর্ণ রাতটি এ উম্মতের জন্য মহান রবের পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। আর এই মহান নিয়ামত পেতে হলে রমজানুল মোবারকের শেষ দশকের প্রিয় নবী (সা.) ইতেকাফের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (সহীহ বুখারী হাদিস : ২০১৭) কোরআন মাজিদে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে সেই সকল লোকদের জন্য পবিত্র কর যারা এখানে তাওয়াফ করবে, ইতেকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা করবে। (সূরা বাকারা আয়াত ঃ ১২৫) এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, ইতেকাফের বিধান ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর জামানায় ছিল। আল্লাহ সবাইকে ইতেকাফ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা টাউন জামে মসজিদের খতিব খুলনা আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ্ গতকাল জুমার খুৎবায় বলেন, উম্মতে মুহাম্মদীকে এমন কিছু সম্মাননা আল্লাহ দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মতকে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য।’ প্রাচীনতম এই মসজিদের ইমাম ইতেকাফ সম্পর্কে বলেন, রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতেকাফ করতে হয়। ইতেকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সন্নিধানে চলে যায়। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ১২৫ আয়াতে বলেন, যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ‘মাকামে ইবরাহিম’কে নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেয়ো না।’

আমাদের সকলকেই আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, যারা যাকাত এখনো দেননি গরিব আত্মীয় স্বজনের মাঝে আগে যাকাতের অর্থ বন্টন করতে হবে। রমজানের শেষ সময়টুকু বেশি বেশি তওবাহ ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহ মাফ চাইতে হবে। যে রমজান পেয়েও গুনা মাফ করে জান্নাত লাভ করতে পারলো না সে ধ্বংস হোক। রাসূল (সা.) এ প্রসঙ্গে আমিন বলেছেন। খতিব বলেন, কোরআনে ইরশাদ হয়েছে কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। যারা রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে সুন্নতে ইতেকাফ করবে লাইলাতুল কদর তাদের নছিফ হবে। শেষ দশ দিনে বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে হবে। রাসূল (সা.) কখনো ইতেকাফ ছাড়েননি। মা- বোনদের ঘরের নির্দিষ্ট রুহেই ইতেকাফ করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।

মাগুরার নিজনান্দুয়ালী বায়তুন-নুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা ওসমান গণী সাঈফী জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, পবিত্র মাহে রমজানকে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত তথা তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দেখতে দেখতে রহমত ও মাগফেরাতের দিনগুলো অতিবাহিত করে আমরা একদিন পরেই প্রবেশ করব নাজাতের দশকে। রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর এমনটি হয়ে থাকতো যে, আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত তখন তিনি কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোনো ত্রুটি করতেন না। মহানবী (সা.) এর শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা সিদ্দিীকা (রাযি.) আনহা বর্ণনায় একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি কি ভাবে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন এবং তার পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন। (বুখারি)। রমজানের শেষ দশকে হুজুর (সা.) ই’তেকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল ক্বদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.) আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, হুজুর (সা.) এর মৃত্যুর পর মহানবী (সা.) এর পবিত্র স্ত্রীগণও এ সুন্নত অনুসরণ করতেন। (মুসলিম)। কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- ‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফ কর।’ (সূরা বাকারা: আয়াত : ১৮৭)। আল্লাহ সবাইকে ইতেকাফের সুযোগ কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন। আমিন।

দিনাজপুর গোর এ শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর। এই সম্মানিত রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা কদর নাযিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এই মহিমান্বিত রাত সারা বছরের সমস্ত রাত অপেক্ষা সর্বাধিক মর্যাদাশীল, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, ও মহিমান্বিত বলে এ রাতের নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল কদর। যে ব্যক্তি এই রাত জাগরণ করে ইবাদত বন্দেগি কান্নাকাটি তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে কাটায়, সেও মর্যাদাশীল এ রাতে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল হয়েছে। এ রাতে হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের দল নিয়ে জমিনে অবতরণ করেন। রাসূল (সা.) বলেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। রাসূল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি হজ ও দুটি ওমরা এর সওয়াব লাভ করবে এবং ৪০ দিন পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারাদারের সাওয়াব লাভ করবে। আল্লাহ সবাইকে ইতেকাফের সওয়াব নছিব করুন। আমিন।

ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইতেকাফ মহান আল্লাহ তায়ালা সাথে সম্পর্ক গড়ার একটি উত্তম উপায়। একজন মু’মিন বান্দা রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করে, এই দশদিন সে একেবারেই আল্লাহর খাস রহমাতের মধ্যে থাকে। সকল ধরনের পাপ থেকে মুক্ত থেকে, পার্থিব সকল ব্যস্ততা থেকে বিরত হয়ে একান্ত ভাবে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। যার ফলে আল্লাহর সাথে তার সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়। হযরত আয়শা (রাদি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় ইতেকাফ করবে তার পূর্বের সকল গুনাহরাশি মাফ করা হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতেকাফ করবে জাহান্নাম তার থেকে তিন খন্দক দূরে যাবে। আর এক খন্দক সমান পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দূরত্বের সমান। তাছাড়া ইতেকাফকারী শবে কদর থেকে মাহরূম হয়না। আল্লাহ সবাইকে রমজানের হক পুরোপুরি আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মীরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি দিন ও রাত বড় ফজিলত সম্পন্ন । এর মধ্যেই রয়েছে বছরের সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। যার সওয়াব হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। তদ্রূপ এ দশকের প্রতিটি রাত ও দিন ইতেকাফের জন্য বড় পূণ্য ও বরকতময়। ইতেকাফ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি চূড়ান্ত মাধ্যম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে প্রতি বছরই ইতেকাফ করতেন। সাহাবায়ে কিরামকে ইতেকাফ করার জন্য উৎসাহিত করতেন। হুজুর (সা.) এর স্ত্রীগণ ও সাহাবায়ে কিরামগণও ইতেকাফ করতেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ইতেকাফ ও লাইলাতুল কদরের সওয়াব লাভে ধন্য করেন। আমিন।
ঢাকার উত্তরা ১৪ নং সেক্টর বাইতুল মামুর মসজিদের খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার বয়ানে বলেন, রমজানের শেষ দশক উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ সময়। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন যখন রমজানের শেষ দশক শুরু হতো, তখন রাসূল (সা.) রাতে জাগ্রত থাকতেন এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে জাগিয়ে দিতেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে লাইলাতুল কদর হাজার হাজার মাস ইবাদতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। আর কদরের রাত শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে হয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, নবী কারীম (সা.) রমজানের শেষ দশকে মৃত্যু পর্যন্ত ইতেকাফ করতেন। উম্মতের গুনাহগারদের জন্য শেষ দশকে খালিস তওবা করা খুব বেশি জরুরি। কেননা নবী কারীম (সা.) এর ভাষ্যমতে রমজানের মধ্যে গুনাহ মাফ করাতে ব্যর্থ ব্যক্তির চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে খাঁটি তওবা করার তৌফিক দিন। আমিন।

ঢাকার গাউছিয়া মার্কেট জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ইয়াহইয়া গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুমিনদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (সহীহ মুসলিম)।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’ ‘হে আল্লাহ! আপনি অতিশয় ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজা) এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন জুমার বয়ানে বলেছেন, ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান। আর রমজানের শেষ দশক আরো মর্যাদাপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি বিশেষ দয়া করে লাইলাতুল কদর দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান অবস্থায় সাওয়াবের আশায় ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। কদর পাওয়ার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো দশ দিন ইতেকাফ করা। প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতেকাফ ত্যাগ করেননি। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রমজানের শেষ ১০ দিন রাসূল (সা.) অধিক আমল করার উদ্দেশ্যে লুঙ্গি ভালো করে বেঁধে নিতেন, রাত জাগতেন, আর ঘরবাসীদেরকেও জাগাতেন। তাই আমাদের উচিত কদরের রাতকে গনিমত মনে করে প্রতিটি মুহূর্ত জিকির, তেলাওয়াত ও ইবাদতে মগ্ন থাকা, দুনিয়ার অনর্থক কথা-কাজ থেকে বিরত থাকা, দান-সাদাকা করা, খাঁটি তওবা করে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা অনেকেই রমজানের শেষ দিকে এসে কেনা-কাটা ও ঈদ আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। গাফিলতি ও অলসতায় শেষ দশকের মহামূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের উদ্দেশ্যে ইতেকাফসহ বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button