দেশ

মাঝে মাঝে মনে হয়, সব কিছু বন্ধ করে দিই : প্রধানমন্ত্রী

যোদ্ধা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন হয়েছে। তবে এ খাতে খরচ নিয়ে সমালোচনায় মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা সব কিছু বন্ধ করে দিই। আবার ৩ হাজার মেগাওয়াটে ফিরে যাই। গতকাল সোমবার সকালে নিজ কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা ভাতা ও অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। অপর দিকে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা হচ্ছে যা কিছু দোষ সব সরকারের। মশা কামড় দিলেও সেটা সরকারের দোষ, এখন কত মশা মারবে! মশার তো প্রজননের হার অনেক বেশি। সেই প্রজনন যাতে না হয় সে জন্য নিজের বাড়িঘর সাফ রাখতে হবে।

অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা ভাতা ও অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রীর নিজ কার্যালয়ের করবী হলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির খন্দকারও বক্তব্য রাখেন। বিএফইউজে এবং ডিইউজে নেতাসহ বিভিন্ন সংবাদিক সংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত ৪৩৮ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের অগ্রযাত্রা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা সমালোচিত হয় এমন কোন সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এমন কোন সংবাদ প্রকাশ করবেন না যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। কারণ, এতে আমরা নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি। তিনি আরো বলেন, গঠনমূলক সংবাদ সরকার চালাতে সাহায্য করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম অবশ্যই সরকারের সমালোচনা করবে এবং স্বাধীনতা ভোগ করবে, তবে তা যথাযথ দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার সাথে করা উচিত। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা (দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার কারণে) আর বাধাগ্রস্ত হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। তবে তাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা অবশ্যই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে আপনাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে। তাঁর সরকার বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৪ বছরে সাংবাদিক সমাজ যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করেছে এর আগে তা কখনোই করেনি। গণমাধ্যমকে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে তা দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরে আরো সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে ওয়েজবোর্ডের আওত্বায় আনতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা নিজেদের জন্যে বাড়ি করতে চাইলে সরকার জমির ব্যবস্থা করতে পারে অথবা কিস্তিতে সরকারি ফ্ল্যাট দিতে পারে। এ সময় তিনি সংবাদ মাধ্যম মালিকদের বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে অর্থ সহায়তা দেয়ার আহ্বানও জানান।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল বিটিভি, এখন তাঁর সরকার মূলত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যে বেসরকারি খাতে অনেক টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রকে লাইসেন্স দিয়েছে।
বিদ্যুৎ সেক্টরের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, আমাদের সরকারের কার্যক্রমের হিসাব ১৯৯৬ সাল থেকে দেওয়াই ভালো। তখন তো আরও দুরবস্থা ছিল, মাত্র ১ হাজার ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। আমরাই বিশেষ আইন করে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বাড়িয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি, দেখি সেখান থেকে এক হাজার মেগাওয়াট নাই। যাই হোক, তিন হাজার ৮০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের আশু করণীয় ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেই। দীর্ঘ মেয়াদি বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার। আমরা যদি আশু করণী ব্যবস্থাটা না নিতাম তাহলে চিন্তা করে দেখেন, ওই ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট হয়তো একশো-দুইশো করে বাড়ত। কিন্তু ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ তো পৌঁছাতে পারতাম না।

তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথাই বলে। কুইক রেন্টাল দেওয়া হলো কেন, হিসাবও বের করে দেয় যে, এতো হাজার কোটি টাকা তাদের (কুইক রেন্টাল) দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, দিয়েছি। কিন্তু তার বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটুকু এগিয়েছে সে বিবেচনাও তো করতে হবে। চৌদ্দ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি, এটা বাস্তব কথা। কিন্তু এই ৯০ হাজারের বিপরীতে আজ বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় দাঁড়িয়েছে!

সমালোচকদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই সব লেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে আবার ৩ হাজার মেগাওয়াটে ফিরে যাই। ফিরে গিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিই যে, কী অবস্থা হতো দেশে ! মাথায় ঢুুকতো কেন এটা করা হলো। সমালোচনা করতে পারেন, সমালোচনা ভালো। কিন্তু সেই সমালোচনাটা আমি মনে করি গঠনমূলক হওয়া উচিত। সেই সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংশোধনের সুযোগ থাকা উচিত।

এ দিকে ঢামেকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যালামনাই ট্রাস্ট কলেজের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনায়তনে। এতে সভাপতিত্ব করে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. জুলফিকার রহমান খান। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের-বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক প্রমুখ।

ব্যাপক আকারে ছড়ানো চলমান ডেঙ্গুজ্বর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তো সবার বাড়ি সাফ করে দিয়ে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা যার যার নিজের ব্যাপার। নিজেকেই সচেতন করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।

ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বেশি দরকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যার যার ঘরবাড়িতে মশা যেন না থাকে, সে দিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশে একটা সমস্যা হচ্ছে যা কিছু দোষ সব সরকারের। মশা কামড় দিলেও সেটা সরকারের দোষ, এখন কত মশা মারবে! মশার তো প্রজননের হার অনেক বেশি। সেই প্রজনন যাতে না হয় সে জন্য নিজের বাড়িঘর সাফ রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরের মেয়র সাহেব বললেন, এত বড়লোক বিশাল বিশাল ফ্ল্যাটে থাকে, তাদের বাড়ির ভেতরে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে। সেটা তারা সাফ করবেন না, সরকারকে বোধ হয় সাফ করে দিয়ে আসতে হবে। বাড়ি তাদের, জায়গা তাদের, মেন্টেনেন্সের জন্য একটা সার্ভিস চার্জ দিচ্ছে। কিন্তু তারা সেটা সাফ করবেন না, কে করে দিবে? সরকার যেয়ে করে দিবে? সরকার তো সবার ঘরবাড়ি যেয়ে যেয়ে সাফ করে দিয়ে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা যার যার নিজের ব্যাপার।

এ সময় গবেষণায় মনোযোগ দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানানও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার খুব অভাব, হাতে গোনা কয়েকজন গবেষণা করেন। চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা একটু গবেষণার দিকে মনোযোগ দেন। গবেষণার জন্য যত টাকা লাগে আমরা দেবো, তারপরও আপনাদের প্রতি অনুরোধ গবেষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের ঘরে বসে না থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুসরণ করা উচিত। তারা কীভাবে কাজ করে তা দেখেও অনেক কিছু শেখার আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢামেক থেকে যাতে ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে পারে, সে রকম একটি প্ল্যান আমি হাতে নিয়েছি। আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, যার মাধ্যমে মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button