বিএনপি কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেবো না : প্রধানমন্ত্রী
যোদ্ধা ডেস্কঃ বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে কোনো অগ্নিসংযোগ বা নাশকতামূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে চায়। আরো অনেকেই নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক এতে আমাদের কথা নাই। তারা যদি আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করে, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি দুর্বৃত্তপরায়ণতা করে, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না। এটাই বাস্তবতা। গতকাল শনিবার নবনির্মিত ১৫ বিশিষ্ট বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন শেষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ওই সমাবেশের আয়োজন করে। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় নবনির্মিত অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৫ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন উদ্ধোধন করেন।
এ সময় দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন এই বিএনপি আমাদের কতো নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তাদের হাঁড় গুঁড়োগুঁড়ো করে হত্যা করেছে। এরপর আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। তারা সে সময় ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ৩ হাজার ২২৫ জন লোককে অগ্নিদগ্ধ করেছে, ৫শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ৩৮৮টি গাড়ি, সাধারণ মানুষের প্রাইভেট কার, সিএনজি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে। চলমান প্রাইভেট গাড়ি, বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করেছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং মামলা চলমান রয়েছে সে মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এটা আমার অনুরোধ। কারণ, এদেরকে যদি সাজা না দেয়া যায় এরা এতো অন্যায় করেছে যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সব থেকে বেশি নির্যাতিত। তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? কেন তাদের বিচার কাজ দ্রুত হবে না। সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কারণ, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এসব অপরাধীর মামলা কেবল চালালেই হবে না তারা যেন যথাযথ শাস্তি পায় তার ব্যবস্থা আপনাদের করতে হবে। এটা আইনজীবীদের কাছে তাঁর নিজের দাবি বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে, সে ব্যাপারে সরকার ‘লক্ষ্য রাখছে’ বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিচারহীনতা যেন এদেশে আর না চলে। ন্যায় বিচার যেন মানুষ পায়। স্বজন হারিয়ে বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের যারা আমরা আপনজন হারিয়েছি তারা তা বুঝি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইন পাওয়া, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি।
রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ- আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণ যাতে করতে পারি। সেই সঙ্গে আইনজীবীদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যাতে সাজা পায় সে জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আইনজীবী সমিতির ভবন শুধু বড় বড় শহরে না, জেলায়ও করা হবে। এ জন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা কিছু ফান্ড তৈরি করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও দেয়া হবে।
প্রত্যেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন করে দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন ডিজিটাল, রায় ডিজিটাল, বাংলায় অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ই-জুডিশিয়াল সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা এবং ৩ নভেম্বরের জেলহত্যার বিচার করতে পারায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকুরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোশতাক, জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু থাকতে পারেনি। বেঈমানরা কখনো থাকে না। কাজেই মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের। তিনি আরো বলেন, তিনি (জিয়াউর রহমান) ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে, বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চালু করেন ইনডেমনিটি আইন।… যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান তাদের ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন পদ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এরপর ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায় ৯৬ সালে। তখনই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার শুরু করি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জিয়াউর রহমান জড়িত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে সুবিধাভোগী তো সে (জিয়াউর রহমান)। ক্ষমতায় আসার পর অপরাধীদের পুরস্কৃত করেছে। তার হাতেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা হয়েছে। কি অন্যায়ভাবে… এমন দিনও গেছে ১০ জনকে ফাঁসি দিয়েছে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। আজকে সেই বিএনপি-জামায়াত এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়।
এ সময় আইনজীবীদের কোথাও এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে যা পারবে উৎপাদন করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করতেও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ থেকে ’৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ২৯ বছরে এদেশের মানুুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নাই। যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল, দেশের জন্য নয়। কিন্তু একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিবিনি খেলতে না পারে যেটা আগে করেছিল, সেটা যেন আর করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমার একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন তাই উৎপাদন করেন। তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সেই সঙ্গে এখন আবার নতুন করে প্যালেস্টাইনের ওপর যে হামলা হচ্ছে, একটা হাসপাতালে হামলা করে শিশু, নারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আজকে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আরো বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ.এম. আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজীবুল্লাহ হিরু।