ড. ইউনূসে আশাবাদী বাংলাদেশ
ড. ইউনূসে আশাবাদী বাংলাদেশ
মার্কিন বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ পাঁচ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের মধ্যে ভিয়েতনামই দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তারা আলোচ্য জানুয়ারি-আগস্ট আট মাসে ৯৫৬ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৯৬৬ কোটি ডলারের রফতানির চেয়ে ১ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার রফতানিও কমেছে। গত জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে ভারত রফতানি করেছে ৩২১ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। তাদের রফতানির পরিমাণ ২৬৮ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৬৫ কোটি ডলার। ওই বছরের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশটিতে পোশাক রফতানি কমে যায়। তবে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আবার অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বাড়তি শুল্ক থেকে বাঁচতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মাঝে করোনার ধাক্কার পর ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রেকর্ড ৯৭২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আবার রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এ বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, বন্যা ও শ্রম অসন্তোষের কারণে টানা তিন মাস পোশাক খাতের উৎপাদন ও রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে আশাবাদী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
জানতে চাইলে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে আশাবাদী। তার মাধ্যমে আমরা যদি দেশটি থেকে কোনো ধরনের শুল্ক সুবিধা নিতে পারি, তাহলে আমাদের রফতানি বাড়বে।
বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর ইউএসটিআরএর একটি দলের সঙ্গে আগেও জিএসপি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেখানে মার্কিন প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটি প্রত্যাহার করা গেলে তৈরি পোশাক শিল্পে রফতানি আরো বাড়ত। কিন্তু তখন স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নমনীয়তা দেখায়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টার এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বাংলাদেশ।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি ছিল মানবাধিকার ও শ্রমিকদের বিষয়ে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শ্রমিক, মালিক ও সরকারÑ তিন পক্ষ মিলে কাজ করছে। ইতোমধ্যে সব কিছুর সফল সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, জিএসপি না পাওয়ার জন্য এই খাতের কোনো ব্যর্থতা তিনি দেখেন না। কারণ যেসব শর্ত বেধে দেয়া হয়েছিল তার বেশির ভাগই পূরণ করা হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, জিএসপি সুবিধা থাকলে আমদানির শুল্ক দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের পণ্যগুলো প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায়। সেটি মাথায় রেখে অন্য আমদানিকারকরাও বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। তাই জিএসপি সুবিধা বহাল হলে বাংলাদেশের পোশাক খাত তথা দেশের ইমেজ সঙ্কট দূর হবে। এই সুবিধা ফিরে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।