রাতের অন্ধকারে আর ভোট হবে না :চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় সিইসি
যোদ্ধা ডেস্কঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এইবার আর আগের মতো ভোট হবে না।
পাঁচ আগস্টের পরে ভোটের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ৯১, ৯৬ এর মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিধিবিধান অনুযায়ী একটা রেজিস্টার্ড দল। তারা যদি দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন করবে না তাহলে তো আমরা জোর করে তাদের করাতে পারব না। তিনি গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন।
সরকার যদি নিষিদ্ধ না করে আওয়ামী লীগের নির্বাচন করতে বাধা নেই সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত না এলে বিধিবিধান অনুযায়ী আমরা কিছু করতে পারব না। আর তারা ৭২ সালের পর থেকে রেজিস্টার্ড দল। আমরা তো আর তাদের বাদ দিতে পারব না। সরকার যদি নিষিদ্ধ করে তাহলে আর কাউকে তো রেজিস্ট্রেশন দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগের মতো রাতের অন্ধকারে আর ভোট হবে না, এটা কেউ কামনা করেনা। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কেউ বিরোধিতা করেনি, সবাই একমত। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদসহ কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাগণ।
১৭ বা ১৮ বছর বয়সে ভোটার করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ১৮ বছর বয়সে ভোটার করার বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ আছে। সংবিধান পরিবর্তন করে যদি ১৭ বছরে ভোটার করার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন আপনারা দেখেছেন, এর পরবর্তী নির্বাচনগুলোও দেখেছেন। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। আগের তিনটি নির্বাচন কমিশনের ওপর নানামুখী চাপ ছিল, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, কারো কোন ধরণের চাপ আমাদের মাঝে নেই, আমরা শুধু বিবেক, আইন-কানুন ও শাসনতন্ত্রের চাপে আছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করে ২ তারিখে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং মার্চের ২ তারিখে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়ে যাবে। সেটি প্রতিপালনে আমরা বদ্ধপরিকর। ভোটার তালিকা সিডিউল করার আগ পর্যন্ত এটি সংশোধন করা যায়। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে, এখানে অনেক ভুয়া ভোটার আছে। অনেক বিদেশী ভোটার হয়ে গেছে, অনেক ভোটার মারা গেছে, কেউ মারা গেলে ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য কেউ বলে না। মৃত ভোটারগুলোর অনেকের নাম এখনও তালিকায় অমৃত হিসেবে রয়ে গেছে, কবর থেকে উঠে এসে ভোট দিচ্ছে। এখন থেকে এটা হতে দেব না, তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে, মহিলাসহ যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে তাদের যুক্ত করে তালিকা হালনাগাদ করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ইভিএম’র প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মহিলারা ভোটার হওয়ার জন্য এগিয়ে আসে না। অনেকে মনে করে আমার ভোট অন্য জনে দিয়ে দেবে, নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে কি হবে, তাই ভোটার হয়ে কি আর হবে। এ জন্য ভোট নিয়ে মানুষ আস্থা হারায়। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবো, এটা আমাদের টার্গেট। মানুষ ভোটার হওয়ার জন্য এখানে গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সিইসি আরো বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখান থেকেই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে কমিশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ভিজিটের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করলাম। আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে, আইন অনুযায়ী মার্চে সম্পন্ন করব। এটাকে আরো সংশোধন করার জন্য পরবর্তীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করবো। এজন্য মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে।
নির্বাচন বা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে মানুষ কেন অসন্তুুষ্ট, কি ব্যবস্থা নিলে কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, অসন্তুুষ্টি দূর করা যায় সে বিষয়ে মতামত নেয়া হবে। নতুন এনআইডি আবেদন, এনআইডি সংশোধন ও এনআইডি পাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপনের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ আসে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ভোটার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব করা যায় সেগুলোর সার্বিক বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ চেয়ে দিকনির্দেশনা দেবো।