জিয়া অর্থ-অস্ত্র দিয়ে তরুণদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন : প্রধানমন্ত্রী
যোদ্ধা ডেস্কঃ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষার পথ থেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের জাতীয় কাউন্সিল এবং বৃত্তি বিতরণ-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব দেখা গেছে।
এ সময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য এবং এটি অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের শেষ জাতীয় বাজেট দিয়েছে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকার এবং আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শেষ বাজেট দিয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার সবসময় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাজেটে শিক্ষাখাতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলেন এবং তাঁর সরকার শিক্ষা খাতে ৮১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পরপরই সারাদেশে ৩৬ হাজার বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার জন্য তাঁর সরকার যে বৃত্তি দিত তা বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এমনকি স্কুলের জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের কাছ থেকে টিউলিপ ব্র্যান্ডের ১০,০০০ ল্যাপটপ কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। টিউলিপ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হওয়া সত্ত্বেও তারা মনে করেছিল যে, শেখ রেহানা এই কোম্পানির মালিক। বাতিলের কারণে বাংলাদেশকে আইনি লড়াইয়ে হেরে নেদারল্যান্ড সরকারকে ৬০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর সরকারও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার ছাত্রদের স্কুলে বিজ্ঞানে উৎসাহিত করতে সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। কারণ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় তারা বিজ্ঞানে অল্প কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিল।
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য তারা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমাদের শিশুরা মেধাবী হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষার একই গতি বজায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। তিনি বলেন, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারে সে জন্য ন্যানো-টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করতে আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক, কম্পিউটার ইনকিউবেশন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি।
দেশের শিক্ষার্থীদের স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তরুণদের এমনভাবে শিক্ষা দিন যাতে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। তিনি আরো বলেন, আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দিতে, দেশপ্রেমিক হতে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ চালিয়ে যাব। শেখ হাসিনা জানান, এই দিনে (২০০৭ সালের ১৬ জুলাই) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথমে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল।
জরুরি অবস্থার সময় আমাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমিন নামের একজন সামরিক কর্মকর্তা তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন- যিনি তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন, তিনি মর্যাদা চান না, নির্বাচন চান, যার মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা সেনা সদস্যকে তিনি বলেন, আমার বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার সম্পদ বা বাড়ি-গাড়ির কোন লোভ নেই। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আমি আমার ভাগ্য গড়তে নয়, দেশবাসীর ভাগ্য গড়তেই দেশে ফিরে এসেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ অনেক এগিয়েছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল কানেকটিভিটিসহ সার্বিক উন্নয়নে সাড়ে ১৪ বছর আগের তুলনায় আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। তিনি বলেন, ১৪ বছর আগের দিকে তাকালে এবং এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বাংলাদেশের তুলনা করা যায়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।