হিলারি নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছিলেন : প্রধানমন্ত্রী
যোদ্ধা ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে না রাখলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করা হতে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি বড় দেশও বারবার চাপ দিত। এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। সে মামলায় হেরে যায়। তারপরই তার বিদেশি বন্ধু দ্বারা…এটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলো, মিস্টার জলি তাকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এমন অভিযোগ তুলেন। ওই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে এই ছাত্রসমাবেশ করা হয়। এ সময় গত ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশে ব্যাপক নেতা-কর্মীর শোডাউন করে ছাত্রলীগ। মিছিলে- স্লোগানে প্রায় সারা দিনই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা মুখরিত রেখেছিল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আগে থেকেই সমাবেশটিকে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ করার ঘোষনা দেয় ছাত্রলীগ। এর মধ্য দিয়ে মূলত শক্তি প্রদর্শন করে সরকারের পক্ষে আগামী নির্বাচনে তরুণদের উজ্জিবিত করার উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের ওই সমাবেশস্থল সোহওয়ার্দী উদ্যান গতকাল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বিকেলে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হতে থাকে। দুপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও সমাবেশ প্রাঙ্গনে আসনে থাকেন নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে করে সমাবেশে আসেন। ফলে দুপুরে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সাইন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেলে সমাবেশ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে সোহওয়ার্দী উদ্যানের আশে-পাশের এলাকাও ছাত্রলীগের নেতা-কমীতে পূর্ণ হয়ে যায়। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে জমায়াতে হন। সমাবেশে আগামী নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে শপথ নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার বক্তব্যের পরে বলেন, আজ আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি শপথ নিবো। আমরা শেখ হাসিনাকে কথা দেবো, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, সেটা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো। তিনি এরপর শপথ পাঠ করান। এ সময় দাঁড়িয়ে এক হাত সামনে বাড়িয়ে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে এই শপথ পাঠ করেন ছাত্রসমাবেশে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের মাথায় ছিল বিভিন্ন রঙয়ের টুপি। কারও মাথায় ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লেখা ব্যান্ড, কিংবা একই রঙা টি-শার্ট। সোহওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘ওয়ানস অ্যাগেইন শেখ হাসিনা; স্লোগান ধরে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের নেতারা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক করে দিয়েছি। বিদেশে যারা যাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা যেতে পারবে। কোনো ঘরবাড়ি বিক্রি করা লাগবে না।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য সেটাও সরকারি বেতনধারী। সরকারি আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবে। এর বেশি হলে থাকতে পারবে না। তারপরও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই।
পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দূর্ণীতির অপবাদ চাঁপাতে চেয়েছিল এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও তো আরো ৩ বার নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কই আমার নিজের জন্য তো কিছু করা চিন্তা করি নি। কিংবা আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও না। তাদের শিক্ষা দিয়ে বলেছি, একটা সম্পদই দিতে পারবো, সেটা হলো শিক্ষা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অল্প সময় পেয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করেছি। সে সময় যেখানে খালেদা জিয়া তার ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল, বলেছিল ছাত্রদলই নাকি আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। সেখানে আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম, খাতা আর কলম। বলেছিলাম, পড়াশুনা করতে হবে, কারণ লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ না হলে কোন আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। আর অশিক্ষত ও মূর্খদের হাতে দেশ পরলে সে দেশে কোন দিন অগ্রযাত্রা হতে পারে না। আমরা যদি ৭৫ সালের পরবর্তীকালের কথা চিন্তা করি তাহলে বুঝবো। তারা জাতিকে কি দিয়েছে।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য এমন উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিটি অর্জনে ওতপ্রতভাবে জড়িত। আমরা যদি শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাই তাহলে দেখবো ছাত্রলীগই তার বুকের রক্ত দিয়ে দেশের প্রতিটি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাঙালীর ইতিহাস এ কথাটি বলে গেছেন জাতির পিতা। এটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগই সেই শক্তি, এই তারুণ্যের শক্তি এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশকে যে আমরা গড়তে পেরেছি। আসলে আমরা যদি দেখি, আমিও তো ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম। আমরা মন্ত্রীসভায় অনেকে আছে, সবাই তো ছাত্রলীগ করে আসা। কাজে প্রতিটি কাজ আমরা যে দেশের উন্নয়নে করতে পারছি, সে ক্ষেত্রে কিন্তু ছাত্রলীগের অগ্রনী ভূমিকা রয়েছে। কারণ একটি আদর্শ নিয়ে যে সংগঠন তৈরী হয় সেই সংগঠনই পারে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে।
তিনি বলেন, করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ যারা করে তারাই নেমেছে কিন্তু সেই সাথে ছাত্রলীগই দেখেছি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, হাসপাতালে নেওয়া, মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন ছাত্রলীগ অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে।
বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ যে ধানকাটাসহ বিভিন্ন কাজ করেছে এ জন্য সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের প্রতি নিজের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসা মূলত স্বাধীনতার চেতনাকেই ধ্বংস করার জন্য। আজকে কোন হত্যা হলে সবাই বিচার চায়, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা দেখি মানবাধিকারের কথা বলে, আমার প্রশ্ন ১৫ আগস্ট আমার মা-বাবা ভাই সব হারালাম তখন তখন তো আমাদের বিচার চাওয়ারও অধিকার ছিল না। ৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক বাধা অতিক্রম করে ফিরে এসেছিলাম। এক রকম জোর করেই দেশে এসেছিলাম।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করব। যেই চেতনা নিয়ে আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সারা জীবন কষ্ট সহ্য করেছেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণ করব। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই দেশে ফিরেছিলাম। তারপর থেকে আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল কীভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
২০০১ সালে চক্রান্ত হয়েছিল এমন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কিন্তু আমি রাজি হই নি। খালেদা জিয়া রাজি হয়ে গেল। ২০০১ সালের পর আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে সেই কথা কেউ বলে না। ঘরে ঘরে হাহাকার, নির্বাচনের আগে ভোট কেন্দ্রে আমার কর্মীরা যেতে পারে নি। আর ভোটের পরে বিএনপি-জামায়াত দিয়ে হাতুরি দিয়ে আমাদের কর্মীদের হত্যা করেছিল।
তিনি ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে, অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ছাত্রলীগকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন দেখি ছাত্রলীগ দূর্যোগের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ায় গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এইভাবে আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগ যদি কাজ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ কখনো একেবারে বন্ধ করতে পারবে না, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, এ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করবো। কবির ভাষায়, এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। আমার কোনো ভয় নেই। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় কেউ যাতে নস্যাৎ করতে না পারে, তোমাদের (ছাত্রলীগ) অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি তোমাদের বলবো, শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি।