জেলার খবরদেশ

জাতিসংঘ ৭০ গুমের অভিযোগ তদন্ত করে না কেন?

যোদ্ধা ডেস্কঃ ৭০ গুমের অভিযোগ জাতিসংঘ নিজে তদন্ত করে না কেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে গুম নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অহেতুক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কখনো গ্রহণযোগ্য না। গতকাল শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া। দৈনিক ইনকিলাব পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক জাতিসংঘের দেয়া তথ্য তুলে ধরে জানতে চান, বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে আরেকটি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে গুমের ঘটনা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বহুবার এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বছরের জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৮৮টি গুমের অভিযোগের প্রকৃত অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছিল এবং তার জবাবে ৫ জন আটক ও ১০ জন মুক্ত অবস্থায় আছেন বলে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে। বাকি ৭০টি ঘটনার কোনো নিষ্পত্তি হয়নি’। এই ৭০টি ঘটনার ব্যাপারে আপনারা জাতিসংঘকে কিছু জানাচ্ছেন না কেন বা কবে নাগাদ জানাবেন? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ রকম অভিযোগ অনেকে অনেক কিছু দেয় কিন্তু তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। কোনো নাম দিতে পারে না, কোনো কিছুই দিতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, বলা হচ্ছে অমুক লোক নাই কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সে ঠিকই জীবিত আছে। আবার কেউ অনেক সময় নিজেরাই পালায়। অনেক সময় ধার-কর্য করে নিজেরাই লুকিয়ে পড়ে; সে ধরনের ঘটনাও আছে। প্রত্যেকটা কিন্তু খোঁজ করে বের করা হচ্ছে। যেখানে এতগুলো নাম (গুম) দেওয়া হলো, তার মধ্যে কয়েকটা ঘটনাই পাওয়া গেছে সত্য। সেগুলোর সম্পর্কে ঠিকই রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আর রিপোর্ট দেওয়া হলো না কেন নিজেরা তারা (জাতিসংঘ) তদন্ত করে দেখুক। নিজেরা তদন্ত করে না কেন, সেটাই তো আমার প্রশ্ন। সেটা করুক। তিনি আরো বলেন, যারা হত্যাকারী, খুনী বা বোমা হামলাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী অগ্নিসন্ত্রাসী কই তাদের ব্যাপারে তো কোনো কথা নেই! যখন এই বাংলাদেশে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারতো, সে সময় তো এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো তেমন কোনো সোচ্চার হয়নি! তিন হাজার ২২৫ জন মানুষকে পোড়ানো হয়েছে। ৫০০ এর মতো মানুষ শুধু পুড়েই মারা গেছে। তিন হাজার ৮০০ এর উপরে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। তখন এই মানবাধিকারের চেতনাটা ছিল কোথায়? সেটা আমার প্রশ্ন।

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেন এই স্যাংশন জানি না। তো ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জারি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ মানবাধিকার ও ভোটসংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকার বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্র্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার, সেটা আমরাই তো করেছি। আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, এ স্লোগান তো আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিক্টেটর (সামরিক স্বৈরাচার) দেশ শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেওয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে। এরই প্রতিবাদে আমরা আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম করে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কাজেই সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ধরনের কোনো স্যাংশন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, আমাদের দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেটা র‌্যাব হোক, পুলিশ বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে, আমাদের দেশে কিন্তু তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এ ধরনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোন দেশ দেবে? তাদেরকে যদি চাইতে হয়, তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আদালতের উপর হস্তক্ষেপ করার আমাদের কোন সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য, এখানে সরকারের যে টুকু ক্ষমতা আছে, যে এখানে তার সাজাটা স্থগিত করে তাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া গেছে, তিনি নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। আর যদি তাদের যেতে হয় বাইরে, তাহলে আমি যে অনুমতি দিয়েছি তা উইড্র করতে হবে, উনাকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয়, তখন তিনি যেতে পারবেন।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতে ১ লাখ ৪১ হাজার মামলা করা হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো মোটেও (মামলা) নতুন করে কোন কিছু করা নয়। শেখ হাসিনা আরো বলেন, মামলা চলমান প্রকৃয়া। মামলাগুলো কত বছর ধরে চলছে, এক একটা মামলা। চলতে চলতে এ পর্যন্ত এসেছে। আর বিএনপি যে মামলা হিসেবে দিয়েছে, সে হিসেবের কি কোন তালিকা দিতে পেরেছে। এখানে একটা বিষয়, আমার নিজের বিরুদ্ধেই তো এক ডজনের বেশি মামলা দিয়েছিল খালেদা জিয়া কই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমরা তো কোন মামলা দেই নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই মামলাগুলি চলতে চলতে একটা একটা করে নিস্পত্তি হচ্ছে। এখনই তা দ্রুত করা হচ্ছে না তো না। তিনি বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা সেগুলোও তো চলছে, মামলা তো কখনো থামে না। আর বিএনপি যে অপকর্ম করেছে, সে তুলনায় তাদের তো কিছুই করা হয় নি।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা অপরাধ করেছে, করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা অপরাধী তারা তো অপরাধীই, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুরনো মামলা নতুন করে সচল করা হয়েছে কীনা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার আবার পুরাতন কী। অপরাধী, অপরাধীই। যদি নতুন করে অপরাধ করে তখন নতুন করে মামলা হবে। যে অপরাধী যে ট্রাকে আগুন দিলো তাদের কি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হবে এমন প্রশ্নও রাখেন শেখ হাসিনা।

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটাও কিন্তু কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও তারা ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি, মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং, আমরা এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া…। তো ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশিরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই স্যাংশন জানি না।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অর্থ্যাৎ গুম-খুন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথা বলি, এমন অভিযোগ অনেকে অনেক কিছু দেয়। কিন্তু তার কোন প্রমাণ দিতে পারে নি, কোন নাম দিতে পারে না, কোন কিছুই দিতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক লোক নাই, কিন্তু তাকে খুঁজে পায় যাচ্ছে, সে ঠিকই জীবিত আছে। অনেকে নিজেরাই পালায়, অনেকে ধার-কর্য করে নিজেরা লুকিয়ে পরে। সে ধরনের ঘটনাও আছে। প্রত্যেকটা কিন্তু খোঁজ করে বের করা হচ্ছে।

সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে নিয়ে আসার কোন উদ্যোগ সরকার নেবে কী না এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই তত্ত্বাবধায়কের জন্য বিএনপি যখন ১৫ ফেব্রুয়ারী (১৯৯৬) নির্বাচন করে তখনই আমরা আন্দোলন করেছিলাম। ওই যে ভোট চুরি যখন করে তখন। তখন কিন্তু পাবলিক ওইটা চাচ্ছিল। তখন বিএনপি নেত্রীই বলেছিলেন, পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নাকি নিরপেক্ষ নাই। এটা তাদেরই কথা। এ সময় আগামীতে বিএনপি নেতা কে সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে যে তাদের (বিএনপি) নেতাটা কে? মানুষ ভোট দেবে কাকে। মানুষ একজন নেতৃত্ব দেখতে চায়। যে তাকে ভোট দিলে তিনি দেশ চালাবেন। বিএনপি কি এমন কাউকে সামনে আসতে পেরেছে? শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালের জরুরী অবস্থার পর কিন্তু উচ্চ আদালতের রায় ছিল, যে বাংলাদেশে আর কখনো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। একটা নির্বাচিত সরকার পরিবর্তে আরেকটা নির্বাচিত সরকারকেই আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই প্রদ্ধতিটা বিএনপি নষ্ট করেছে।

প্রধানমন্ত্রী ল-েেন পৌঁছেছেন : এ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফর শেষে গতকাল শনিবার লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট গতকাল শনিবার লন্ডন সময় বেলা ১১টা ৭ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি গত শুক্রবার ওয়াশিংটন সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসির ডুুলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাওনা হয়।

এমন আরো সংবাদ

এই সংবাদটিও পরতে পারেন
Close
Back to top button