দেশ

বৈদেশিক আয় বাড়াতে নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ

যোদ্ধা ডেস্কঃ বৈদেশিক আয় বাড়াতে নতুন বাজার খোঁজার দিকে মনোযোগ দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রফতানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমাদের আরো নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রফতানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মাসব্যাপী ওই ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এখন থেকে রাজনীতি নয়, অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও এ সময় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। একটা বা দুইটার ওপর আমাদের নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। কারণ অনেক চড়াই উতরাই পার হয়েই আমাদের আসতে হয়। সেটা মাথায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, এবার যে নির্বাচন ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রফতানি আয় বাড়াবো ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনও অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই।

সারা বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রফতানি আয় ২০২২ – ২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রফতানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে।

সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সঙ্গে রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয় ‘ট্যারিফ পলিসি ২০২৩’ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রফতানিতে আরো সুযোগ সুবিধা এনে দেবে।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিদেশি অতিথিরা আছেন। আমি একটা অনুরোধ করবো, আমাদের আমদানি-রফতানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রফতানি করেন, রফতানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয় তার যে রিটার্নটা আসবে ঠিক চাহিদা মতো তা আসে না। সে দিকে সবাইকে একটু যত্নবান হওয়ার আমি আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবছর একটা পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দেই। পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এভাবে প্রতিবছরই বর্ষপণ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবার আমি ঠিক করেছি ‘হস্তশিল্প পণ্যকে’ ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণার। হস্ত শিল্পকে বর্ষপণ্য করার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এবারের যে বর্ষপণ্য অর্থাৎ ‘হস্তশিল্প পণ্য’ সেটা আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বীতা অর্জন করতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না ঘটে, কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায় রাখতে পারবে না।

এখন থেকে রাজনীতি নয়, অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি কূটনৈতিক মিশনে আমরা এই মেসেজটাই দিয়েছি যে, এখন আর রাজনৈতিক না, এখন আমাদের ডিপলোমেসি যেটা হবে অর্থাৎ এখন আমাদের কূটনীতি হবে অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কীভাবে আমরা ঘটাব, সেটার ওপরেই আমাদের কূটনৈতিক বিষয়গুলি কাজ করছে, কাজ করবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়। আমার কাছে ক্ষমতা হলো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ, মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ, মানুষকে সেবা দেওয়ার একটা সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আবার সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৯৬ সাল থেকে যখন সরকার গঠন করেছি সেখান থেকে একটা প্রচেষ্টা, আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নত করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মেলায় স্থানীয় টেক্সটাইল, মেশিনারিজ, কার্পেট, প্রসাধনী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্র্রনিক্স, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, গৃহস্থালীর পণ্য, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, খেলাধুলার সামগ্রী, স্যানিটারি সামগ্রী, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, ভেষজ সামগ্রী, টয়লেট্রিস, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, হস্তশিল্প, গৃহসজ্জা, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য প্রদর্শিত এবং বিক্রি হবে। তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইরানের কোম্পানিগুলো এ বছর তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। বানিজ্য মেলায় প্রবেশ মূল্য সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় খোলা হবে এবং কর্মদিবসে রাত ৯টায় বন্ধ হবে। সপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা রাত ১০টা পর্যন্ত মেলায় থাকতে পারবেন। ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button