দেশ

চেয়ারম্যান তপন ও মেম্বার অজিতকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা

যোদ্ধা ডেস্কঃ ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব রটিয়ে পরিকল্পিতভাবে মোটা রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে খুঁচিয়ে, পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথা থেতলিয়ে দুই ভাই কোরআনে হাফেজ আরশাদুল ও আশরাফুলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দৈনিক ইনকিলাবের এ সংবাদের কুলু ধরেই ফরিদপুর জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার সেই পথে হাঁটছেন। প্রশাসনের চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ এবং অব্যাহত তদন্তে বেরিয়ে আসছে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক কারা। নেতৃত্বে ছিল কারা? কেন হত্যাকাণ্ড! এ ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং ডুমাইন ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় গেছে বলে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার গত শুক্রবার রাতে তার দফতরে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করছেন। তিনি তাদের ধরিয়ে দিতে বা কোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আর্থিক পুরস্কারের দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মধুখালীর ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার নিজে এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একজন পেশাগত অপরাধী। ইতোমধ্যে সে এর আগে আরো দুইবার বরখাস্ত হয়েছে। একবার মধুখালী নির্বাহী অফিসারের ওপর হামলার ঘটনায় এবং আরেকবার টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণে তাকে বহিস্কারও করা হয়। দুইবারই উচ্চ আদালতে আপিল করে তিনি পদ ফিরে পান। আবারো দম্ভের সাথে তার পূর্বের পেশায় ফিরে যায়। তবে দুই জনই তথা (চেয়ারম্যান ও মেম্বার) এখন পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। চেয়ারম্যান আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রথমে মাগুরায় শনাক্ত করে। সেখানে ধরতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে যশোরে তাদের শনাক্ত করলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এরই মধ্যে এয়ারপোর্ট বর্ডার রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তারা যাতে কোনো ভাবে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সকলের সহযোগিতা চাই। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। কেউ যদি অন্যান্য আসামিদের অবস্থানও জানাতে পারেন তাহলে তাদেরও উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে। এ সময় তিনি আরো জানান, এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সময় আরো ৭ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে ধর্মমন্ত্রী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ আর্থিক সহায়তা করা ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করছেন। এ ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ও তাদের পরিবারকে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যসামগ্রী প্রদান ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এ ঘটনাকে নিয়ে যাতে কোনো মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সকলের সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক। সাম্প্রদায়িক উস্কানির কাজে কেউ যাতে এ ঘটনাকে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো বাড়িতে আক্রমণ করে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। এজন্য আসামিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এবং তদন্ত রিপোর্ট না দেয়া পর্যন্ত মধুখালীতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন থাকবে বলেও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসিন কবির, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামানন্দ পাল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক চৌধুরী রওশন আলী, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button