দেশ

ক্ষোভে ফুঁসছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা

যোদ্ধা ডেস্কঃ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীগুলোতে পদোন্নতি, বেতনসহ সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি পেলেও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। শুধু তাই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে আগের তুলনায়ও কমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুবিধা। এতে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। বিরক্ত হয়ে অনেকেই ছাড়ছেন চাকুরি। আবার স্বায়ত্তশাসনের ঘাটতি ও কাজের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ হওয়ায় শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া কর্মীরাও আর ফিরছে না। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনস্থ জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এক সময় বিসিএস, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো চাকরি ছেড়ে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসতেন। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের ঘাটতিতে হতাশা, চাকরির সুযোগ-সুবিধা কমে আসার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ও দশম (কর্মকর্তা) গ্রেডে প্রবেশন কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্তির ক্ষেত্রে ফিডার পদে চাকরিকাল আড়াই দুই বছর ছিলো। কিন্তু বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৩ সালে এই নীতিমালা পরিবর্তন করে চাকরিকাল ৫ বছর করা হয়। যদিও বিশেষ প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাকরির বয়স ৪ বছর হয়েছে এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়। নতুন নীতিমালার কারণে হাজারের বেশি কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে যায়।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায়ও হাত দিয়েছেন নতুন গভর্নর। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ-তালিকাভুক্ত কর্মীদের ওভার টাইমের অর্থও কর্তন করার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে আমাদের পদোন্নতি হওয়ার কথা ছিলো। ওই উপলক্ষ্যে পরিবারের সবাই জানতে চায় যে, এই বছর আমার পদোন্নতি। কিন্তু হঠাৎ করে নতুন নীতিমালার কারণে পদোন্নতি আটকে যায়। এটা খুবই হতাশা জনক। তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫৭ জন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অফিস আদেশ জারি করে। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন উপপরিচালক ও একজন অফিসার। বাকি ৫৫ জন সহকারী পরিচালক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগে বিসিএস চাকরি ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মীরা আসতো। এমনকি আমি নিজেও বিসিএস ছেড়ে এসেছি। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়ছে। এটা হতাশার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন ও কাজের স্বাধীনতা কমে যাওয়ায় অনেককেই হাতাশ বলে জানান এই কর্মকর্তা। এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় পরবর্তী করনীয় ঠিক করতে আজ সোমবার একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। ওই অনুষ্ঠানে এক প্রচার পত্রে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাগণের ইতোপূর্বে প্রাপ্ত ১ দশমিক ৫ বেসিকের সমান শ্রান্তিবিনোদন ভাতা, ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের রেজাল্টের উপর নির্ভর করে প্রদত্ত একটা অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট, ট্রেনিং একাডেমির কর্মকর্তাগণের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে প্রাপ্য ভাতা, ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের কর্মকর্তাগণ ট্রেনিং সমাপনান্তে বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণের সুবিধা, প্রথম নিয়োগের সময় চারটি/তিনটি প্রথম শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট কর্তন বা বাতিল করা হয়েছে। যেকোনো সুবিধা যখন কর্তন করা হয় তখন তা নিশ্চিতভাবেই কর্মকর্তাগণের সন্তুষ্টি ও কর্মস্পৃহাকে অবদমিত করে এবং উল্লিখিত বিষয়গুলো গভর্নর ঘোষিত ভিশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যদিও গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে এপেক্স রেগুলেটরি বডি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা-কে তার একটি অন্যতম ভিশন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের সময়োপযোগী মুদ্রানীতি প্রণয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণসহ নানাবিধ জটিল ও বুদ্ধিবৃত্তিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু সরকারের বিভিন্ন বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/বাহিনীর কর্মকর্তাগণের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি পেলেও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাগণের সুবিধাসমূহ কমছে বা কর্তন করা হচ্ছে যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাগণের মধ্যে অসন্তষ্টি ও হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারের ৫ম গ্রেডভুক্ত উপসচিবগণ ৩ বছর মেয়াদ পূর্তিতে, সশস্ত্র বাহিনীর মেজর ও সমমান পদমর্যদার কর্মকর্তা, এমআরএ, তিতাস গ্যাস এবং পিকেএসএফসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সমমানের সরকারের অন্যান্য প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের ৫ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাগণ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা/সুবিধা প্রাপ্ত অথবা সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহার সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা এইসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, যা তাদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাক্ষুন্ন করছে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অনুযায়ী বৈষম্যের শিকার। তাই করনীয় ঠিক করতে মতবিনিময় করবে তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি এইচ. এম. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, আগামীকাল (আজ) আমাদের একটি মতবিনিময় সভা আছে। সেখানে আমরা আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এরপর জানতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজাউল হক বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার কাছে অফিসিয়াল কোন তথ্য নেই।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button