দেশ

মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। এই মেট্রোরেলে দুই লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল আরকি, বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করেন যাহারা, তারা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মেট্রোরেল না করলেই চলতো। এটা তো অপচয়। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজট মুক্ত হবে। এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি। শেখ হাসিনা বলেন, এখন মেট্রোরেল মানুষের জীবন বিশেষ করে নারীদের জন্য সব থেকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন— সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।

যোদ্ধা ডেস্কঃ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি, সে যেই হোক দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে ধরবো। এ সময় তিনি আরো উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার কখনো ভুলে যায় না, এ জন্যই দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী নয় বলেও এ সময় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কয়েক কোটি টাকার মালিক, ঢাকা শহরে এক কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারেন না। সেটা তারা আয়কর দিতে পারেন না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল ইসে ফিরে আসে, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এই ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে, সেই জন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়।
অতীতে খালেদা জিয়াও এই সুযোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরো অনেকে নিয়েছিলেন। তারাও কিন্তু এরকম ভাবে সেই ২০০৭/২০০৮ বা তার পরবর্তীতে এভাবে কিন্তু তারা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন। মনে হয়, একটু খোঁজ নিতে হবে। আমি জানি না আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হবো। সে ধারাবাহিকতা আমাদের আছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের কিন্ত নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা কিন্তু নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না। জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। এই বাজেট প্রণয়নকালীন আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেটির অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিক নির্দেশনা- সেটাও বাজেটে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার যে লক্ষ্য আমরা স্থাপন করেছি, তারই অংশ হিসেবে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বাজেট শতভাগ বাস্তবায়ন হবে বিষয়টা এমন না, তবে আমরা লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম তা প্রমাণ হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ক্ষুধা-দারিদ্র্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ; এ জন্য বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি মোটেই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনো পূরণ হয় না। তারপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাবো। সেটা আমরা যেতে পেরেছি। কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট! আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই (বড় বাজেট বাস্তবায়ন) সম্ভব হয়েছে। আমাদের ইচ্ছাটা কী? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সে জন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। তারা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যে যাই করুন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে… ইত্যাদি। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে আসতে পেরেছে। আজকের বাংলাদেশ হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়ার বাংলাদেশ নয়। আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি। যারা পরিবর্তনগুলো দেখেন না তাদের বলবো গ্রামে যান। গ্রামের মানুষের যে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, এরশাদের উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা নেই, সেটাও দেখবেন। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলকায় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো। সেখানে ছুটে গেছি, মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। গ্রামের পর গ্রামে গিয়েছি, মানুষের শরীরে মাংস ছিল না চামড়া আর হাড় ছাড়া। এখন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছি।

বিদ্যুতে ভর্তুকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের সক্ষমতা যখন কম ছিল, তখন কম বিদ্যুৎ হলেও চলতো। এখন সক্ষমতা বেড়েছে মানুষের, তাই বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বিদ্যুতে, এটা সামনের দিনগুলোতে আর দেয়া হবে না।

এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘিরে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু বিশেষ আইনটা যদি না করতাম, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করতাম, তাহলে এত বিদ্যুৎ পেতাম কোথায়? যারা সমালোচনা করেন এটা নিয়ে- তারা হয় অজ্ঞানতায় করেন, নয় তো ইচ্ছাকৃতভাবে। কিছুদিনের মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ চালু হবে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুলশান-বনানী-বারিধারায় অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই বিদ্যুৎ গ্রামে সরবরাহের নির্দেশ দিচ্ছি আমরা। গ্রামে যাতে কোনোভাবেই লোডশেডিং না হয়।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button