দেশ

ফ্যাসিবাদী দোসর মিডিয়া লীগে সংস্কার জরুরি

ফ্যাসিবাদী দোসর মিডিয়া লীগে সংস্কার জরুরি

যোদ্ধা ডেস্কঃ জুলাই বিপ্লবীরা তাদের বিপ্লবের রং হিসেবে লাল কে নির্বাচন করেছিল আর ফ্যাসিবাদীরা বেছে নিয়েছিল কালো। জুলাই মাস জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত পরিধানে লাল কালোর এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে। আগস্ট মাসে যখন আন্দোলন পরিণতির দিকে যেতে শুরু করে তখন হঠাৎ করে শুরু হয় রং পরিবর্তনের নজিরবিহীন কাণ্ডকারখানা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যাসিবাদের সমর্থকরা তাদের পূর্বের পোস্ট ডিলিট করে বা অনলি মি করে দিয়ে লাল রং দিয়ে প্রোফাইল পিকচার দেয়া শুরু করে এই রং বদলের মিছিলে যোগ দেয় বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের দোসর হিসেবে পরিচিত মিডিয়া লীগও। যারাই মূলত বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগকে এবং শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। এরা মুজিব পরিবার শেখ হাসিনার শাসনামল এগুলোকে ধ্রুব হিসেবে ধরে নিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়েছিল দেশে। অর্থাৎ মুজিব পরিবার, শেখ হাসিনা এবং তার শাসনামলের সমালোচনা করা মানেই রাষ্ট্রের সমালোচনা করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে মানদন্ড দাড় করিয়েছিল। এদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা এবং আওয়ামী শাসনামলের বিরোধিতা করা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ। এটাই মূলত ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয় এবং আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে সহায়তা করে।

বিগত ১৫ বছরে যে সমস্ত মিডিয়া ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, মুজিব পরিবার এবং আওয়ামীলীগের শাসনামলকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রেখে সব ধরনের স্তুতি বাক্য ব্যয় করে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনামলকে প্রলম্বিত করেছিল সেই মিডিয়াগুলোই এবং সেই মিডিয়ার পরিচিত মুখগুলো অতি দ্রুত রং পাল্টে ভোল পাল্টে ফ্যাসিবাদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল। এ কাজটি তারা তাদের আত্মোপলব্ধি থেকে করেনি করেছে নিজেদের আত্মরক্ষার্থে।

৫ আগস্ট স্বাভাবিক কোন সরকার পরিবর্তন বা ক্ষমতার পরিবর্তন ছিল না। এটি একটি বিপ্লব ছিল। বিপ্লব প্রতিবছর বা প্রতি যুগে ঘটে না। কখনো শত বছর আবার কখনো হাজার বছরে ঘটে থাকে। ৫ আগস্ট এমন একটি বিপ্লব ছিল। পৃথিবীতে এ ধরনের বিপ্লবের পরে বহু বছর যাবত নানা ধরনের ঘটনা- দুর্ঘটনা ও প্রতি বিপ্লবের প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ এর পরেও নিরস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্যে হত্যার দৃশ্য সারা বিশ্বে আলোচিত হলেও বাংলাদেশের মিডিয়া এ নিয়ে কোনদিন উচ্চবাচ্য করেনি। এমনকি, মুক্তিযুদ্ধের ২৫-৩০ বছর পরেও যাদের জন্ম তাদেরকে তাদের পিতামহ, মাতামহ ও পিতার অপরাধের দায়ভার চাপিয়ে সমাজে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। পৃথিবীর কোন সভ্য আইন পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে দায়ী করে না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শাসনামলে এই চর্চা ব্যাপকভাবে ছিল। এরই চূড়ান্ত রূপ জুলাই বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করতে সহায়তা করেছিল। সেই দিন আজকের রং পাল্টানো মিডিয়াকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়নি কেন পিতামহ বা পিতার অপরাধের দায় অপরাধ সংগঠনের ২৫ থেকে ৩০ বছর পর জন্ম নেয়া একজন সন্তানের উপর বর্তাবে।

অথচ আজ জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের অব্যবহিত পরেই এইসব মিডিয়াকে লাউ ও কদুর পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বিপ্লব পরবর্তী ছোটখাটো নানা দুর্ঘটনা যেভাবে মিডিয়ায় যেভাবে ফলাও করে সামনে এনে সমালোচনা করছে ফ্যাসিবাদের আমলে তাদের এমনটি করতে দেখা যায়নি। তার মানে এই নয় যে, আমরা এ ধরনের ঘটনাগুলো আমরা সমর্থন করছি। কিন্তু যেভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে সামনে এনে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে এবং সরকারের ও বিএনপির সমালোচনায় মুখর হতে দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে।

আজকে তোফাজ্জলকে নিয়ে যে প্রশ্ন তুলছে মিডিয়ায়, এর চেয়েও নির্মমভাবে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু সেদিন মিডিয়া এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এমনকি দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরেও মিডিয়া পাড়ায় সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে কোন মিডিয়াকে উৎসাহী হতে দেখা যায়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেগা প্রজেক্ট এর নামে যেসব মেগা দুর্নীতি হয়েছে এই সব মেগা দুর্নীতি নিয়ে কোন মিডিয়া নিজস্ব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে দেখা যাচ্ছে না। কেবলমাত্র দুদকের সূত্রে যে সমস্ত তথ্য আসছে সেগুলো নিয়ে নিউজ করছে তারা।

২০০৭ সালের পর থেকে ১৮ বছরে বিএনপি ও সরকার বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে তা নিয়ে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আজও মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে না। শত শত মানুষকে গুম করা, হত্যা করা, নির্যাতন নিপীড়নের স্টিম রোলার যেভাবে চালানো হয়েছে সেগুলো নিয়ে কোন মিডিয়ায় সেভাবে প্রশ্ন তুলতে দেখা যাচ্ছে না। বিগত ১৮ বছরে কয়েকটি প্রজন্ম শুধুমাত্র নিজের বা পরিবারের অথবা স্বজনের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি সহ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশার জীবনে নিপতিত হয়েছে। জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। সেসব নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে দেখা যায় না। মিডিয়ায় কথা বলতে দেখা যায় প্রতিবছর কল্পনা চাকমাকে নিয়ে। কিন্তু শাপলা চত্বরে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করার বিষয় নিয়ে মিডিয়া নিশ্চুপ। পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এসব মিডিয়ার কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চোখে পড়ছে না। শেয়ারবাজার, ব্যাংক লুট, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার মিডিয়া সেভাবে আলোচনা করছে না। এমনকি মুজিব পরিবারের ভয়াবহ দুর্নীতি নিয়ে মিডিয়াতে একটি কথাও আজ পর্যন্ত উচ্চারিত হতে দেখা যায়নি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা একটি দেশের হাতে নির্লজ্জ ভাবে প্রকাশ্যে তুলে দেয়া বিষয়ে মিডিয়া কথা বলে না। এসবের কারণ ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। আমরা দেখেছি একটি গবেষণা সংস্থার তালিকা। সেখান থেকে কিভাবে বিভিন্ন মিডিয়ার চিহ্নিত ও পরিচিত মুখগুলোকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনাম দেয়া হতো।

এরাই আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোল পাল্টালেও চরিত্র পাল্টায়নি। সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে ছোটখাটো ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার করে তুলকালাম বাধিয়ে দিচ্ছে। এদের মূল লক্ষ্য বিএনপিকে ভিকটিমাইজড করা। তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তোলা।

বর্তমান সরকার দেশের মধ্যে বিরাজমান ফ্যাসিবাদী কাঠামো সংস্কারের জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও মিডিয়ায় এখন পর্যন্ত তার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। মিডিয়া বলতে এখানে ফ্যাসিবাদের দোসর মিডিয়া লীগ বোঝানো হয়েছে। এই মিডিয়া লীগে যদি সংস্কার আনা না যায় তাহলে অচিরেই এরা বর্তমান সরকারের সকল সংস্কারের উদ্যোগে কালিমা লিপ্ত করে কুসংস্কার রূপে জাতির সামনে প্রতিষ্ঠা করতে পিছপা হবে না।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button