দেশ

নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু

যোদ্ধা ডেস্কঃ নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সংবিধান বর্ণিত ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নাম মনোনীত করেছেন। কমিটির ‘সদস্য’ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে। দুই বিচারপতির নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
এদিকে নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সংক্রান্ত ‘সার্চ কমিটি’ গঠিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন যেকোনো সময় কমিটি গঠন-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে সাক্ষাৎদান শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে আজ-কালের মধ্যেই সার্চ কমিটির নাম প্রকাশ করা হবে। তখন সবাই জানতে পারবেন।
তার সঙ্গে ভলকার তুর্কের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন ভলকার তুর্ক। আমরা এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। সম্ভব হলে তিনি আবার আসবেন। এখানে মানবাধিকার অফিস খোলার ব্যাপারে তারা আরো আলোচনা করবেন।

বিচার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতিসংঘের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছেÑ প্রশ্নে এ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনগত সংস্কারের সঙ্গে জাতিসংঘ সম্পৃক্ত রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে আমাদের যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় বা সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, সেটি ওনারা দেবেন বলেছেন। তাদের আমরা বলেছি, আপনারা যদি প্রথম থেকেই মনিটর করতে চান, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আমরা এখানে সুবিচারই করব। কোনো প্রতিশোধ নেবো না। আগের আদালতে যেমন হয়েছে, আমরা সে রকম অবিচার করব না। কাজেই আমাদের কোনো কিছু লুকানোর নেই।

জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলেছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কীÑ জানতে চাইলে ড. আসিফ নজরুল বলেন, তারা সারা বিশ্বেই মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলেন। এটি তাদের একটি প্রটোকল। কিন্তু পৃথিবীর খুব কম দেশই মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। আমাদের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, জুডিশিয়াল কালচার, সেগুলো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। আর মৃত্যুদণ্ড রহিত করার যে প্রটোকল সেখানে বাংলাদেশের কোনো সরকারই পক্ষরাষ্ট্র হয়নি।

নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নাÑ প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে ওনার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে, আপনাদেরকে আমি একটি বিষয় বলতে পারি, আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। আমি যতদূর জানি, প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন সই করে দিলেই আজ-কালের মধ্যে আপনারা এটি জানতে পারবেন। সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এরপর ভোটার তালিকা করা হবে।

আগেও বলেছি, ভোটার তালিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। সর্বশেষ নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্বাচনটাই ভুয়া। তাই ভোটার তালিকা নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করব না। অসাধারণ একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। ফলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এর জন্য কতটা সময় লাগবে, সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনকে কীভাবে সম্পর্কিত করা হবে, এমন অনেক কিছুর ওপর নির্বাচনটি নির্ভর করে। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করবে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল অংশ নিতে পারবে কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ৪০-৫০ হাজার মানুষের অঙ্গহানি ঘটিয়েছে, এখনো এর পক্ষেই কথা বলছে। এখনো তাদের নেত্রী বিদেশে বসে হুমকি দিচ্ছে। অবশ্য অডিও ক্লিপটি যদি সঠিক হয়Ñ ২৮৭ জনকে দেখে নেবে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের মানুষ এটি মেনে নেবে যে, বিচার ও অনুশোচনা হওয়ার আগে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাবে। তারা রাজনীতি করতে আসবে কি আবারো হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য? তাদের কথা শুনে তো তেমনই মনে হয়। ফলে, এগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবে।

এত বড় আন্দোলনকে তারা এখনো বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এই আন্দোলনের নেতাদের কিশোর গ্যাং বলার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে আরো মানুষকে হত্যা করার, দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এই দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত কি-না, সেই প্রশ্নটা বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে রেখে গেলাম। আমাদের সরকার ইতোমধ্যে বলেছে, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, সেটি দেখা যাবে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আকস্মিক এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক মাসের মাথায় গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদায় নেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, তাদের অধীনে চলতি বছর প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারা পদত্যাগের প্রায় দুই মাস পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ-সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করেন প্রেসিডেন্ট।

প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারকে প্রধান করে গঠিত হয়েছে ছয় সদস্যের ‘সার্চ কমিটি’। আইনে উল্লিখিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকে পাঁচজনের সমন্বয়ে প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আইনানুযায়ী সার্চ কমিটির সভাপতি হন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং প্রেসিডেন্ট মনোনীত দু’জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button