প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন
যোদ্ধা ডেস্কঃ ভালো একটি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে উপদেষ্টাগণ নিজ নিজ পেশায় ফিরে যেতে চান। এ কথা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। গতকাল দুপুরে নিজ দফতরের কনফারেন্স লাউঞ্জে এসব তথ্য উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অর্জনের তথ্য তুলে ধরে ড. আসিফ নজরুল জানান, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দায়েরকৃত সব মিথ্যা ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, আপিল বিভাগে পাঁচ বিচারপতি নিয়োগ, হাইকোর্ট বিভাগে একদিনে ২৩ বিচারপতি নিয়োগ, অধস্তন আদালতে ১০৯ বিচারক নিয়োগের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহজতর করার লক্ষ্যে ৬১ জেলায় ৪ হাজার ৩শ’ আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনার পুনর্গঠন, চীফ প্রসিকিউটরসহ ১১ প্রসিকিউটর নিয়োগ এবং সর্বোপরি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ড. আসিফ নজরুল জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হলে উক্ত আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব স্পিচ-অফেন্সের মামলা প্রত্যাহার করা হবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছি। তবে হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে।
আইন উপদেষ্টা বিচারাঙ্গণে বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এতো বেশিসংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশে এর আগে ঘটেনি। এর মাধ্যমে সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে। এখন যে ঢালাও মামলা হচ্ছে, মামলা বাণিজ্য করা হচ্ছে, তাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, যারা ‘মামলা বাণিজ্য’ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) বিস্ফোরক মামলা পরিচালনার জন্য ২০ জন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন সহায়তা করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চীফ প্রসিকিউটরসহ ১১ জন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা তথা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন করার উদ্যোগের কথাও বলেন।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে রোম স্ট্যাটিউট এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এই আইন সংশোধনী অধ্যাদেশ বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, অধ্যাদেশটি পাস হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, নতুন আইনের মাধ্যমেই পরবর্তী বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। অধস্তন আদালতের বিচারক, রেজিস্ট্রেশন অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দফতর সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করা হয়েছে। এই হিসাব বিবরণী এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন অধ্যাদেশ হচ্ছে। সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, একটা-দুটো দিন অপেক্ষা করুন। আর সংশোধনীটা তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনায় যেটা আছে সেখানে আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৪ এবং ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ-২০২৪-সহ ১০টি অধ্যাদেশ প্রণয়নে ভেটিং সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৯৫টি প্রজ্ঞাপন, ৩৩টি বৈদেশিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ভেটিং করা হয়েছে।
আসিফ নজররুল বলেন, গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে। উক্ত কমিশনকেও আইন মন্ত্রণালয় সাচিবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন গত ১২ নভেম্বর আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বেঠক করেছে। আশা করছি, কমিশন বিচার বিভাগের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব দ্রুতই প্রস্তুত করবে।
প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোকে সব প্রকার সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা হবে। সরকার ভালো একটা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অনেক উপদেষ্টা আগের পেশায় ফিরে যেতে চায়।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, দেশে কোনো আসামিকে না পেলে রেড এলার্ট জারির আবেদন করতেই পারি। বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মীদের বরং তাদের নেতা শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করতে পারেন, শেখ হাসিনা কেন অগণিত নেতা-কর্মীদের ফেলে রেখে পালিয়েছেন। নিজে পালানোর তিনদিন আগে তার স্বজনদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তাকে প্রশ্ন করা উচিৎ, তাদের ফেলে রেখে কেন পালিয়েছেন তিনি? আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের মতো দমন-পীড়ন চায় না। অযৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকার বিষয়গুলো দেখছে। কঠোর হলে সরকার ভালোভাবেই কঠোর হবে।