অর্থনীতিদিনাজপুরদেশ

সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় দুদক কর্তৃক আদালতে চার্যশীট দাখিল

যোদ্ধা ডেস্কঃ দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনজুর আলম ও অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দেবশর্ম্মার বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে জেলা স্পেশাল জজ আদালতে চার্যশীট দাখিল করেছে দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন।

দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুত্রে জানা যায় সেতাবগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ মনজুর আলম ও বর্তমানে কর্মরত অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দেবশর্ম্মা পরস্পর যোগ সাজসে অপরাধ মূলক অসদ আচরন প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি পূর্বক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী অনুদান সহ কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭ শত ১২ টাকা আত্নসাৎ করেছে।
আত্নসাতের বিবরনে উলেক্ষ করা হয় কলেজের ক্যাশ বহিতে আয় কম দেখিয়ে ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ২৯ হাজার ৮শত ৪৭ টাকা, ২০১৪ সালে ৩টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৮ হাজার ২শত ৯৩ টাকা একই ভাবে ২০১৫- ২০১৬ অর্থবছরে ৮টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৮শত ৭২ টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১৪টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৬৪ হাজার ৪৯ টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১৬টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ৫২ হাজার ১৩ টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ২৩টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ২০ লক্ষ ৮১ হাজার ৪শত ২৯ টাকা, এবং ২০২০ অর্থ বছরে ১৯টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ১ শত ৬২ টাকা সহ মোট ২৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮শত ১৮ টাকা। এছাড়া ৬টি ছাত্র বেতন আদায় রশিদের মাধ্যমে (ক্যাশ বহিতে উত্তোলন না দেখিয়ে) ৪৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ১ শত ২০ টাকা, ৬টি রশিদের মূল কপি ও কার্বন কপিতে টাকার পরিমান পরিবর্তন (টেম্পারিং) করে ৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯শত টাকা, সরকার প্রদত্ত টিউশন ফি বাবদ ৯৩ লক্ষ ৭৯ হাজার ১৭ টাকা আত্নসাৎ ও কলেজের নামে ১৭ লক্ষ টাকা ভূয়া ঋণ দেখিয়ে আত্নসাৎ, সহ সর্বমোট ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭শ ১২ টাকা আত্নসাত করায় আসামী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মনজুর আলম ও বর্তমানে কর্মরত অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দেবশর্ম্মার বিরুদ্ধে দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছে দিনাজপুর জেলা দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। এ মামলায় ঐ দুইজন আসামীদের বিররুদ্ধে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে আদালতে চার্যসীট দাখিল করা হয়েছে। যার চার্যশীট নং- ০১। দুদক জেলা কার্যালয়ে মামলা নং- ০৯ তারিখ ২১/০৭/২০২২। দিনাজপুর জেলা স্পেশাল জজ আদালতের মামলা নং-১৩/২২। মামলার ধারা দন্ড বিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা।
উল্লেখ ২০১৬ সালে প্রতিটি উপজেলা একটি করে বিদ্যালয় ও সেতাবগঞ্জ কলেজকে সরকারী হিসাবে অন্তরর্ভূক্ত করার ঘোষণার প্রেক্ষিতে গত ০৮/০৮/২০১৮ ইং তারিখে কলেজটি সরকারী করণ করা হয়। অভিযোগ সংশিস্নষ্ট ব্যক্তি মোঃ মনজুর আলম অধ্যক্ষ হিসেবে ০৬/০৬/২০১১ সালে যোগদান করেন এবং ২৮/০২/২০২৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। কলেজের যোগদানের পর হতে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্নসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সে সময় কলেজের শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা দুর্নীতির বিচার চেয়ে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্বারক লিপি পেশ করে। যার সংবাদ সে সময় জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র ও ইলেট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। আলোচ্য অভিযোগের বিষয়ে ০১/০৩/২০২১ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছন্দাপাল ৭ সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটি গঠন করেন। উক্ত অডিট কমিটি বিভিন্ন অসংতি ও অনিয়ম তুলে ধরে একটি অডিট প্রতিবেদন দাখিল করেন। কলেজের শিক্ষক সমন্বয়ে গঠিত অডিট কমিটির গত ১৮/০৭/২০২১ ইং তারিখের সর্বশেষ দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। তদন্তকালে বর্ণিত অডিট ও নিরীক্ষা কমিটি সমূহের সদস্যবৃন্দের বক্তব্য, অভিযোগ সংশিস্নষ্ট ব্যক্তি ও স্বাক্ষরি বক্তব্যসহ সংশিস্নষ্ট রেকর্ড পত্র পর্যালোচনায় মোঃ মনজুর আলম ও নির্মল চন্দ্র দেবশর্ম্মা কর্তৃক বিভিন্ন উপায়ে কলেজের অর্থ আত্নসাৎ করেছেন মর্মে স্বাক্ষ্য প্রমাণে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়।
অপর দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার দুইশত ৬৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ ২০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮শত ২০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক অধ্যক্ষ মনজুর আলমের বিররুদ্ধে গত ০৩/০২/২০২৫ ইং তারিখে অপর একটি মামলা দায়ের করেছে দুদক দিনাজপুর জেলা কার্যালয়। মামলার তদন্তকারী কর্মরত মোঃ নুর আলম, সহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, দিনাজপুর।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button