ট্রেন্ডিং নিউজনির্বাচন

চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রথমবারের মতো কোন নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন করোনার কারণে ১০ মাস স্থগিত থাকার পর গতকাল বুধবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরের মোট ভোটার

১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর ‘নগর পিতা’ হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৭ জন, আর কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন ২২৫ জন। মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান,  মোট ভোট পড়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩টি। ভোট গ্রহণের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টির ফল ঘোষণা করা হয়। দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

চসিক নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা ছিল সব পক্ষের মধ্যে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও উল্লেখ ছিল সংঘর্ষ হতে পারে। হলোও তাই। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ, খুন, ইভিএম ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো নির্বাচন। গতকাল ভোটগ্রহণের পুরো সময়জুড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।

চসিক নির্বাচনে নগরীর ৭৩৫টি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হয় গতকাল। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে সরকারদলীয় এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। মহিলা এজেন্টদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ইভিএমের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। কেন্দ্রগুলোতে বহিরাগতরা দখল করেছিল। আমি নিজে ১৫টি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ভেতরে প্রবেশ করিয়েছি।

তবে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বণিক বার্তাকে জানান, সকাল থেকে আমরা বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। ভোটাররা ভোট দিতে উৎসাহ নিয়ে কেন্দ্রে এসেছেন। সবাই খুশি মনে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির কর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে।

সবকিছু ছাপিয়ে আতঙ্ক গতকালের নির্বাচনে নগরবাসীর মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সংঘর্ষ। মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাই সংঘর্ষে জড়িয়েছে দফায় দফায়। এসব সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক।

নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ আমবাগান স্কুল কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদ উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হলে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. আলাউদ্দিন নামের এক যুবক। অন্যদিকে নগরীর বউবাজার বারো কোয়ার্টার এলাকায় বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই নেজাম উদ্দিন মুন্না ছুরিকাঘাতে নিহত হন। দুই ভাই আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সদস্য ছিলের বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় বিএনপি সমর্থকরা ইভিএম মেশিন ভাংচুর করলে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নগরীর ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে দিনব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতার আশঙ্কায় সকালেই লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমকে আটক করে পুলিশ। কর্নেলহাট এলাকায় সংঘর্ষে মহিলা কাউন্সিলরসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের বাকলিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র, ওয়াপদা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড, জামালখানের বিভিন্ন কেন্দ্রে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।

সহিংসতার বলি শ্রমিক আলাউদ্দিন
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের সহিংসতায় বলি হয়েছে আলাউদ্দিন আলো (১৯) নামের এক শ্রমিক। নগরীর ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় আলাউদ্দিন স্থানীয় এক বস্তির বাসিন্দা। কাজে যাওয়ার আগে নাশতা করতে ঘর থেকে বের হলে কাউন্সিলর প্রার্থীর দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে আলাউদ্দিন।

নিহত আলাউদ্দিনের বড় ভাই মো. জসিম ঘটনাস্থলে বণিক বার্তাকে বলেন, আমার ভাই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। সে এখন পর্যন্ত ভোটার হয়নি। আর্থিক অনটনে থাকা পরিবারের হাল ধরতে কিশোর বয়স থেকেই শ্রমিকের কাজ, ভ্যানগাড়ি চালনা এবং সর্বশেষ রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করত। নির্বাচনের দিন সকালে কাজে যাওয়ার আগে বাসার পাশের দোকানে নাশতা করতে যায়। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সে নিহত হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। শিগগিরই এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাহাড়তলী ১৩ নং ওয়ার্ডে গুলিতে নিরীহ ব্যক্তি নিহতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, পাহাড়তলীতে গোলাগুলিতে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর দায়ীদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button