জানি, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আছে : শেখ হাসিনা
যোদ্ধা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সবাইকে নিজেকে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে যাতে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমি জানি, অনেক চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ লাভবান হয়, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা প্রমাণিত সত্য। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
এ সময় সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো এক ইঞ্চি জমি যাতে খালি না থাকে। যে যেখানে যা পারেন উৎপাদন করেন, ফসল ফলান। নিজেরা খাবেন, বিক্রি করবেন, বিদেশে আমরা রপ্তানী করতে পারবো। আমি নিজেরাও বলার আগেই শুরু করে দিয়েছি। গণভবন এখন কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
নিজ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি আমলের সঙ্গে তাঁর সরকারের আমলে বিভিন্ন সেক্টরে তুলনামূলক উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি,জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এক সময় এ দেশের মানুষের নুন-ভাত জুটাতে কষ্ট হতো। তারা একটু নুন-ভাত চাইতো। তারপরে আসলো ডাল-ভাত। অন্তত মানুষকে আমরা এমন পর্যায়ে আনতে পেরেছি যে, এখন নুন-ভাত, ডাল-ভাত নয়, মাংস পাচ্ছে না সেটা নিয়ে কথা আসছে। অন্তত নুন-ভাত, ডাল-ভাত থেকে মানুষের চাহিদা তো মাংসতে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, আমি জানি, মাংসের দাম বেড়েছে। কিন্তু মানুষের মাংস-ভাত খাওয়ার যোগ্যতা বা সেই সামর্থ্য সেটা তো স্বীকার করতে হবে। অন্তত এই জায়গা আনতে পেরেছি। চাহিদা তো বাড়াতে পেরেছি। বাড়াতে যেহেতু পেরেছি পূর্ণ করতে পারব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল দেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতি মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে।’ এমন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন,আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব, আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির হার অব্যাহত রাখতে হবে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি দু:সময় যাচ্ছে আমি জানি, মানুষের দু;খ, দুর্দশা লাঘবের জন্য প্রানপন চেষ্টা করতে হবে। আশেপাশের যারা বিত্তশালী আছেন,আমি আবারও তাদের বলবো আপনাদের চারপাশের মানুষের দিখে খেয়াল রাখবেন। আমরা কিন্তু বস্তিবাসীদের ফ্লাট বানিয়ে দিচ্ছি। হরিজন যারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী তাদেরও ফ্লাট করে দিচ্ছি। জলবায়ায়ু পরিবর্তন এ যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরও আমরা ফ্লাট করে দিচ্ছি। কোন মানুষ অস্বাস্থ্যকর ভাবে থাকবে না। সবাইকে আমরা ঘর বাড়ি তৈরি করে সুন্দর ভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেব।
সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্বোধন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আগামীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে তারা দেশ ধ্বংস করবে। এ সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মী, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে এই দেশ আরও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি আমাদের গড়ে উঠবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু যারা অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে, সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াতসহ যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না তারা এই দেশকে ধ্বংস করবে।
এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজকে মরযাদা পেয়েছে। যেখানে একটি দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশ হিসেবে একটা করুণার চোখে দেখতো। আজকে বাংলাদেশের জনগণ প্রবাসে যেই যাক সেখানে সম্মানের চোখে দেখে। এই সম্মান এনে দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আজকে তা প্রমাণিত সত্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল, আমরা সরকার গঠন করেছি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের আবার দায়িত্ব দেয়।
টানা তিন মেয়াদের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩, আজকে বাংলাদেশ- বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ ভাগ, তা নেমে এসেছে ১৮ ভাগে। অতিদারিদ্র ২৫ ভাগের ওপরে ছিল তা ৫ ভাগে নেমে এসেছে। স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে, মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে, শিশু মৃত্যুহার কমেছে, মানুষের আয়ুস্কাল বেড়েছে, বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আজকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি সরকারে থাকে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, শিক্ষার আলো জ্বেলেছে সকল ঘরে। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, সমগ্র বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি। কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয় আবারও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে অর্জন করেছে সেটা ধরে রেখে সারা বিশ্বে আরও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটাই আমার প্রতিজ্ঞা।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জন্ম লগ্ন থেকে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বিজয় অর্জন করেছে মুক্তিযুদ্ধে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, ঘাতকের দল অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘণ করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা স্বাধীনতার চেতনাকে ধুলিস্মাত করেছিল, পুনরায় আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন এসেছে।