নির্বাচন প্রস্তুতি ও বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা একত্র আওয়ামী লীগে
যোদ্ধা ডেস্কঃ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা একত্রে করতে কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগে। এই কৌশল নিয়ে দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার জন্য আলাদা কোন কর্মসূচি লাগবে না। তবে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় দলটি যে পাল্টা কমসূচি দিচ্ছে তা মানতেও নারাজ। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আসলে রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে জনগণের কাছে যেতে চাইছে। আওয়ামী লীগের যে সমাবেশ না দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৬ আগস্ট গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে দলটি। ওই সভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সারা দেশে সর্বাতœক জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাবাদুল কাদের গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে দলের জাতীয় কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে দলের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, জেলা-মহানগর ও উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানগণ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র ও সহযোগী সংগঠনসমূহের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণকে সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর শাখার অধীন উল্লেখিত নেতাদের নামের তালিকা যৌথ স্বাক্ষরে আগামী ২৬ জুলাই ২০২৩ তারিখের মধ্যে দলের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে এবং বর্ধিত সভায় সকলকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদী এটিই হবে আ.লীগ নেতাদের সবচেয়ে বড় বৈঠক। বৈঠকে আওয়ামী লীগ দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের জন্য কাজ করতে এবং অভ্যন্তরীণ সব কোন্দল মিটিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলবেন। একই সঙ্গে দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যারা নির্বাচন বানচালের যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিবে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিহত করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনাও দেবেন। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকে প্রায় ৫ হাজার দলীয় নেতা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীর্দে ঘরে ঘরে গিয়ে ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে দিয়ে সরকারের উন্নয়ন, অর্জনগুলো তুলে ধরনে নির্দেশনা দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দলীয় প্রধান অবশ্যই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলবেন। এ ছাড়া বিএনপির এক দফা আন্দোলনের কোন সহিংসতা করলে যেন ছাড় না দেওয়া হয় এ বিষয়ে তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেবেন। এর বাইরে দলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলবেন। এ ছাড়া প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। এসকল বিষয় তো থাকবেই। তবে উনি আর কি কি বলবেন সেটা তো আমি বলতে পারবো না।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষে আওয়ামী লীগের এই সভার কারণ শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগ বড় কোন সভা করে না। তবে নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় এই আগস্টেও জেলায় জেলায় কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। সঙ্গে শোকের মাসের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে দলটি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আগামীতে সারা দেশেই জনসভা করবেন। আগামী ২ আগস্ট রংপুরে একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলতে চান। রংপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ওই জনসভাকে ঘিরে গত শুক্রবার সেখানে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ছাড়া রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ ওই বিভাগে দলের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ইনকিলাবকে বলেন, জনসভা সফল করতে আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের টিম, ওই বিভাগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ বিএনপির বড় কর্মসূচির দিন নিজেরাও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি ডাকছে। গত কয়েকদিনে দেখা গেছে বিএনপি যখন ঢাকায় বড় কর্মসূচি দিয়েছে রাজপথে তখন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থেকেছে। যাকে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি বলতে নারাজ। গত ১২ জুলাইল বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ ডেকেছে। এর পরে গত ১৮ ও ১৯ জুলাইও বিএনপির কর্মসূচির দিন দলীয়ভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় আলাদা কর্মসূচির প্রয়োজন পরবে না। বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করবে। এ জন্য কোন বাধাও দেওয়া হবে না বলে দলীয়ভাবে নির্দেশনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, টানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা গেলে এমনতেই বিএনপির আন্দোলনে মোকাবেলা করা যাবে। কিন্তু যেহেতু বিএনপি নেতারা অতীতে অভিযোগ করে আসছে তাদের ওপর হামলার, আর মার্কিন ভিসানীতির পরে তাই বিএনপির কর্মসূচিতে যে কোন প্রকার হামলা না করতে দলীয়ভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে যদি বিএনপি হামলা করে, কিংবা দেশের মানুষের কোন সম্পদে হামলা করে তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে গত কয়েক মাস থেকে বক্তব্য দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগ কি বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আছি, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। এ বিষয়ে তো আমরা অনেক আগেই দলীয়ভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমরা দেশের স্বার্থের মাঠে থাকবো।
চলতি মাস ও আগামী আগস্ট মাসে দলের কর্মসূচি কেমন হবে তার একটি ধারনা গত ১৪ই জুন দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এক সভা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের ফোকাস হচ্ছে শোকের মাস। আগস্ট মাস। আগস্ট মাসের আর বেশি সময় বাকী নাই। এ মাস পর আগস্ট মাস। শোকের মাসের আমাদের কর্মসূচি মোটামুটি আমরা সবাই জানি। তিনি আরো বলেন, সেপ্টেম্বর মাস নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সতর্কতার সাথে রাজপথে আছি, থাকব।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সেপ্টম্বরে সারা দেশে সরকারের এতদিনে অর্জন ও সাফল্য তুলে ধরে জনসংযোগ করতে চায় দলটি। এ কর্মসূচিতে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় জেলায় যেমন জনসংযোগ হবে তেমনি বিভাগীয় ও একেবারে তৃনমূল পর্যায়েও জনমত তৈরীতে কাজ করবে দলটি। এ কর্মসূচিগুলোতে সরকারের আমলে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যে অর্জন তা তুলে ধরে দেশেকে বোঝানো হবে যে আওয়ামী লীগের আমলে কি কি বাস্তব সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। তবে আগস্ট মাসেই শোকের মাসের কর্মসূচির বাইরে জেলায় জেলায় জনসভা করবে দলটি। যে সকল জনসভায় দলীয় প্রধানও বক্তব্য রাখবেন। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আলাদভাবে কর্মসূচি রাখার ইচ্ছা আছে আওয়ামী লীগের। সকল কর্মসূচি দলীয়ভাবে বসে ঠিক করা হবে, কোন কর্মসূচিগুলোতে দলীয় প্রধান যাবেন তাও নির্ধারণ করা হবে শীগগীর।