হাই লাইটস

ভোট গ্রহণ ৭ জানুয়ারি

যোদ্ধা ডেস্কঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অফিসে ঝুলছে তালা, দলটির মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে অবরোধ-হরতাল চলছে। দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরামর্শকে উপেক্ষা করেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের ৫৩ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার চলমান বিরোধ সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলো হরতালসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে নির্বাচন প্রতিহতের হুঙ্কার দিয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ১৪ দলীয় জোটসহ আওয়ামী লীগের সমমনা দলগুলো নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এখনো প্রত্যাশা করছে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সুরাহা হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংঘাত পরিহার করে সমাধান অন্বেষণ করুন। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ভাষণে সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়পত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়াও আপিল ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবে ১৮ ডিসেম্বর এবং ৫ জানুয়ারি ২০২৪ সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে। এবার ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপারে।

সিইসি বলেন, রাজনৈতিক মতানৈক্যের সমাধান প্রয়োজন। আমি সকল রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সংঘাত পরিহার করে সমাধান অন্বেষণ করুন। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুসারেই তফসিল ঘোষণা করছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। এমন এক সময় সিইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন, যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন দুই শিবিরে বিভক্ত। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়। সামনে কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দশ বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের আশপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন ভবনের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে।

২০১৪ সালে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও সে সময় ‘আগের রাতে’ ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি। সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে তাদের নির্বাচিত এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবার ২০১৪ সালের মতো একই দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে সহিংসতা। তাতে ডজন খানেক মানুষের প্রাণ গেছে। যানবাহনে অগ্নিংযোগ আর নাশকতার ঘটনায় জনমনে বাড়ছে শঙ্কা। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিবসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে বিএনপির তাদের নেতা-কর্মীর মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে মাঠে হরতাল-অবোরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আসছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button