কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস

কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে তিন লক্ষাধিক মানুষ। প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর পাহাড় দখল করে এসব মানুষ বসবাস করছে, যা কক্সবাজারের মোট বনভূমির এক-তৃতীয়াংশ। এর বাইরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে ৪ হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়। সেখানে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতল ভূমিতে আনা না হলে প্রাণহানিসহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি প্রায় ৫০ হাজার পুরনো ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বসতি স্থাপনে কক্সবাজার অঞ্চলে কাটা হয় নির্বিচারে পাহাড়। বিশেষ করে বর্ষা এলেই পাহাড় কাটার ধুম পড়ে যায়। উদ্দেশ্য ভূমি সমতল করে বসতি গড়া। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, এক যুগে পাহাড় ধসে ৩১৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ছয় সদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ৬২ জন প্রাণ হারান। এছাড়া পাহাড় ধসে ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুন্যার পাহাড়ে একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জন, ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে পাঁচ, ২০১১ সালে ১৯, ২০১২ সালের ২৬ ও ২৭ জুন ২৯, ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড়ে পাঁচ, ২০১৬ সালে ১৭, ২০১৭ সালে ২৬, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় ২৮, ২০১৯ সালে ২২, ২০২০ সালে ২৯, ২০২২ সালে মারা যায় ২৫ এবং চলতি বছর বর্ষার আগেই রামু ও টেকনাফে মারা যায় পাঁচজন। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের।
পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, ‘প্রতি বছর কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুধু বর্ষা এলেই চোখে পড়ে। বর্ষা চলে গেলে থেমে যায় সবকিছু। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে কক্সবাজারের পাহাড় কাটা।’
তবে জেলায় কী পরিমাণ খাসজমি অবৈধ দখলে রয়েছে তার সঠিক এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। এসব জমি দখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের তিন লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব লোককে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। মাইকিং করে সতর্ক করা হয় পাহাড়ে বসবাসকারীদের। এ সময় কিছু মানুষ সরে এলেও পরে আবার আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।
কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জেলায় ১৫২ স্পটে ১ হাজার ২৯৮ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভায় ৬ ওয়ার্ডে ৭ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবারের ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘিরে ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে।